Thursday, 4 August 2022

আমার ছাত্রজীবনের অনার্স-লাইফ

অনার্স-লাইফ আমার ছাত্রজীবনের ২০১৬ সালের এইচএসসি ব্যাচটা অনেক দারুণ ছিল। একতাবদ্ধ ছিলাম। মাঝে একটা বছর হতাশার মধ্যে কাটানোর পর প্রথম চয়েস এ অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হলাম, শুরুতে এসে আরো বেশি হতাশ হয়ে গেলাম। পরে, আমাদের লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ঐ ব্যাচের নিশাত আর নোমানের দেখা পেলাম, ছোট ভাই সম্রাটের সাথে পরিচয় হলো, ছোট ভাই সাওন ক্যামেরা নিয়ে ফটোতোলা শুর করলো, মাঝে একদিন প্লে বয় মিজানের সাথে পরিচয় হলো, হুজুর কে দেখতাম সুমাইয়া আপার দলের সাথে আড্ডা দিতো, হঠাৎ একদিন ছোট ভাই তামিম আসি, মেয়েদের পাশে যাই বলে এটা কি অর্থনীতির ক্লাস? তারেক সাহেব আসি একদিন একটা ভাষণ দিলো, এইভাবেই সবার সাথে ধীরে পরিচয় হল। আমরা ছোট- বড় পরিসরে, ঘুরাঘুরি শুরু করলাম, শুরুতে আমি, সম্রাট, সুমাইয়া, সারমিন, আয়েশা, তামিম, রিয়াদ সহ নাম ভুলে যাওয়া কিছু বন্ধু -বান্ধবী নিয়ে ঘুরেতে গেলাম আলেকজান্ডার, সেই নদীর বসে দক্ষিণে বাতাসে ভার্সিটি লাইফ অনুভব করা শুরু করলাম, বেশ কিছুদিন চলে গেলো- হাঠাৎ একদিন — জন লুবকের লেখাটা সামনে পড়লো.. আকাশ, পৃথিবী, গাছ, পাহাড় হলো সবচেয়ে বড় শিক্ষক, তারা বইয়ের বাইরেও জীবন সম্পর্কে অনেক জ্ঞান দিয়ে থাকে। লেখাটা আমায় আবার হতাশ করে ফেলছে তাই আবার আমরা এগারো জন মিলে এক সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম আমরা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবো। ৪ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে আমরা এগারোজন মিলে নতুন একটা মিশন শুরু করলাম। খুব ভোরে আমরা এগারো জন লক্ষ্মীপুর থেকে যাত্রা শুরু করলাম সম্ভবত ৮টায় আমরা সীতাকুণ্ড শহরে পৌঁছলাম। শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে। এ দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মনে হলো সীতাকুণ্ড যেন মন্দিরের শহর। রাস্তার দুই দিকেই বিভিন্ন ধরনের অনেক মন্দির আমাদের নজর কেড়েছিল তখন। পাহাড়ের নিচে পৌঁছে হালকা নাস্তা করে, মিশন শুরু করলাম। প্রথমদিকে তেমন কষ্ট না হলেও তিনশো ফুট থেকে আমাদেরকে উঠতে হয়েছে খাড়া পাহাড় বেয়ে। কখনোবা চলতে হয়েছে, এক পাশে পাহাড়ের গা ঘেঁষে আর অন্য পাশে খাদ নিয়ে। একবার পা ফসকালেই পড়তে হবে ২৫০-৩০০ ফুট নিচে। মাঝে মাঝে দেখা পায়েছি প্রাচীনকালের তৈরি সিঁড়ি।চারদিকে নিরব-নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে শুনতে পেয়েছিলাম চেনা-অচেনা পাখির ডাক। দেখতে পেয়েছিলাম ঝরনাও। প্রায় ঘন্টা দেড় পর আমরা পৌঁছছিলাম প্রথম পাহাড়ের চূড়ায়। সেখানে রয়েছে শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দির। কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে। অবশেষে খাড়া পাহাড় বেয়ে মাটি থেকে ১২০০ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠলাম আমরা।সীতাকুণ্ডের সর্বোচ্চ উঁচু পাহাড় চন্দ্রনাথে দাঁড়িয়ে আমরা কয়েকটি চলনসই ছবি তুললাম যেটার ক্যামেরা ম্যান ছিলেন তারেক ভাই। তারপর দেখতে পেয়েছিলাম একদিকে সমুদ্র আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম উঁচু-নিচু পাহাড়ের সবুজ গাছপালার দিকে। প্রশান্তিতে জুড়িয়ে গেলো চোখ। মনে মনে ভাবলাম ইস যদি সে থাকতো, তবে পাখির ডাক শুনতো, সবুজ গাছপালা দেখতো। পাহাড় থেকে নেমে সোজা সোজা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে । সুন্দর গুলিয়াখালি সী বিচ কে দেখে প্রকৃতিতে হারিয়ে গেছে সবাই। একদিকে দিগন্তজোড়া সাগর জলরাশি,গুলিয়াখালি সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর মন কেড়ে ছিল সবার। নিরবিলি পরিবেশ আর সাগরের এত ঢেউ দেখে অজান্তেই হারিয়ে গিয়েছিলাম সবাই। তারপর হঠাৎ ফিরার সময় হুজুর আন্তর ভাই, ওনাদের ভাবিদের বাসায় নিয়ে সবাইকে ভালোভাবে খাওয়াইছিলেন, যেটা চিরন্তন কাল মনে থাকবে।এরপর আমরা গন্তব্যে ফিরেছিলাম , সুন্দর এক ভ্রমণ কাহিনির জন্ম হয়ে ছিল সেদিন।। এভাবে একে একে অনেক গুলো স্মৃতিমাখা ভ্রমণ কাহিনি জন্ম দিয়ে ছিলাম যাহা আমার ডাইরিতে নোট আছে। বিশেষ করে আমাদের টিমে বেশির ভাগ ছিল - তামিম, সম্রাট, সারমিন, আয়েশা, তারেক, আন্তর, নুপুর, সুহানি, রিয়াজ। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও সব সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল নেওয়ার চেষ্টা করতাম, তাই সবাই মিলে লক্ষ্মীপুরের সব দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করলাম। এর মধ্যে মতীরহাটের সেই দিনটা বেশি স্মরনীয় হয়ে থাকবে, সেদিন আসহায় পোলাটার জন্মদিন ছিল, ঐ দিন মীর সম্রাট পোলাটা বস্ত্রহীন ছিল, সেদিন কিছু আবাক করা পিক তুলছিলাম। এভাবে একের পর এক ঘুরাঘুরিতে সময় পার কলাম হিসাব করে দেখলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও আমরা কম ঘুরাঘুরি করি নাই। এভাবেই আমার অনার্স লাইফটার ইতি হয়ে গেলো, মাঝে দুই একটা ভুলে, কয়েকজনের সাথে মনমালিন্য হলেও পরে সব ঠিক করে পরিশেষে দীর্ঘ সময় পার করে পেললাম। ৷৷ লেখা-। সোহেল উদ্দিন শুভ

No comments:

Post a Comment

বেলী ফুল